বৃদ্ধ বয়সে টাকপড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ৪০ বছরের পরে গিয়ে মাথার চুল পড়ার গতি চুল গজানোর গতির চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। ফলে সে সময় মাথায় টাকপড়া মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু আজকাল মাত্র ২০ বছর পেরুতে না পেরুতেই অসংখ্য মানুষের মাথায় টাক পড়ে যাচ্ছে। একে বলা হয় অকালে টাকপড়া। আর বিপরীত লিঙ্গের মানুষের কাছে মাথায় টাকপড়াটা একদমই পছন্দের হয় না।
মাত্র ২০ বছর বয়সেই মাথার চুল পড়ে যাওয়ার প্রধান কারণগুলোর একটি হলো টেস্টোস্টেরন হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদন। টেস্টেস্টেরন হরমোন ভেঙ্গে তৈরি হয় ডিএইচটি নামের আরেকটি হরমোন। এই হরমোন নতুন চুল গজানোতে বাধা দিয়ে থাকে।
বাজারে চুলপড়ার নানা চিকিৎসা ও ওষুধ রয়েছে। তথাপি প্রাকৃতিক দাওয়াইগুলো সবসময়ই সেরা। এগুলো হয়তো কাজ করতে একটু বেশি নেয় কিন্তু নতুন চুল গজানোতে বেশ কার্যকর। এমন কয়েকটি শক্তিশালি ঘরোয়া দাওয়াইয়ের উল্লেখ করা হলো যেগুলো মাথায় অকাল টাকপড়া ঠেকাতে খুবই কার্যকর হবে।
ভিনেগার
ভিনেগারের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম এবং অন্যান্য এনজাইম যা চুলের বৃদ্ধি এবং খুশকি প্রতিরোধে অনেক কার্যকর। খুশকি চুলের গ্রন্থিগুলো ব্লক করে দেয় এবং চুল গজানো বন্ধ করে। ভিনেগার দুটি সমস্যারই সমাধান করে থাকে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
উপাদান:
– ৪ টেবিল চামচ ভিনেগার
পদ্ধতি:
১) আপনার নিয়মিত ব্যবহারের শ্যাম্পুর সঙ্গে ভিনেগারটুকু মিশিয়ে নিবেন । এরপর তা মাথায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
২) ১৫ মিনিট পর যথারীতি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করুন।
নারকেল
নতুন চুল গজানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ নারকেল। যা আপনার চুলের গ্রন্থিগুলোকে স্বাস্থ্যবান রাখবে এবং চুলপড়া ঠেকাবে। চুল গজাতেও বেশ সহায়ক নারকেল।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
উপাদান:
– ১ কাপ নারকেল দুধ/তেল
পদ্ধতি:
১) মাথার খুলির ত্বকে নারকেলের দুধ বা তেল সরাসরি প্রয়োগ করে তা ১ ঘন্টার জন্য রেখে দিন।
২) এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করুন।
৩) এছাড়াও নারকেলের দুধ বা তেল আপনার খাদ্য তালিকায়ও যুক্ত করতে পারেন। এতে আপনি অনেক উপকার পাবেন।
আমলা
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা চুল পড়া প্রতিরোধ করে থাকে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
উপাদান:
– ১ টেবিলচামচ আমলার পিণ্ড
– ১ টেবিলচামচ লেবুর জুস
পদ্ধতি:
১) একটি বাটিতে নিয়ে দুটি উপাদানই মেশান
২) মাথার ত্বকে প্রয়োগ করে শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে রাখুন।
৩) ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে যত বেশিদিন সম্ভব ততদিনই ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিনই ব্যবহার করুন।
ভিটামিন ই
দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে নতুন চুল গজানোতে জরুরি ও সহায়ক ভুমিকা পালন করে থাকে ভিটামিন ই। এটি চুলের গ্রন্থিগুলোকে সজীব রাখার মাধ্যম নতুন চুল গজাতে সহায়ক হয়।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
উপাদান:
– ভিটামিন ই ক্যাপসুল
পদ্ধতি:
১) ভিটামিন ই ক্যাপসুল কেটে ভেতরে থাকা ওষুধগুলো সরাসরি মাথার ত্বকে লাগান।
২) এর সঙ্গে আপনি যে কোনো তেল ব্যবহার করতে পারেন।
বীট মূলের জুস
বীট খুবই স্বাস্থ্যকর একটি সবজি। যাতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, সি এবং প্রোটিন। এটি স্বাস্থ্যকর চুল গজানোতে সহায়ক এবং টাকপড়া প্রতিরোধ করে থাকে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
উপাদান:
– ১টি রগড়ানো বীট মূল
– ৩ টেবিল চামচ হেনা
– পরিমাণমত পানি
পদ্ধতি:
১) বীটরুটটি থেকে রস বের করে নিন
২) ওই রসের সঙ্গে হেনা মিশিয়ে নিন এবং পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি খুব বেশি ঘন করবেন না।
৩) পেস্টটি মাথাল লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। প্রদি সপ্তাহে যত বেশিদিন সম্ভব ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিনই ব্যবহার করুন।
অ্যারোমা থেরাপি
চা গাছ, রোজমেরি এবং মেথি অকাল টাকপড়া ঠেকাতে বেশ সহায়ক। তেলগুলোর যে কোনো একটির কয়েক ফোটা মাথার ত্বকে লাগান। এছাড়া আপনি বাদাম বা নারকেল তেলের সঙ্গেও এগুলো মিশিয়ে মথার ত্বকে লাগাতে পারেন।
ধুমপানে ছেড়ে দিন
চুল পড়ার বড় কারণগুলোর একটি ধুমপান। আপনি যদি ধুমপান করেন তাহলে কোনো চিকিৎসায়ই আপনার চুলপড়া থামাতে পারবে না। এছাড়া ধুমপান মাথার ত্বকে রক্ত চলাচলর হারও কমিয়ে দেয়। নতুন চুল গজানোতে বাধার সৃষ্টি হয়।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খান
প্রোটিন চুলের নির্মাণ উপদান। যদি আপনি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার না খান তাহলে আর নতুন চুল গজাবে না। মুরগী এবং মাছের মতো চর্বিহীন প্রোটিন অকাল টাকপড়া ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। সবজিভোজীদের জন্য সচরাচর সবজির পাশাপাশি কালাই বা শিম, মটরশুটি এবং কুইনোয়া জাতীয় সবজি সবচেয়ে ভালো প্রোটিন উৎস হতে পারে।