অনলাইন ডেস্কঃ ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের সদরদপ্তর পিলখানার নারকীয় হত্যাকাণ্ডকে ‘নৃশংস ও বর্বরোচিত’ ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন হাইকোর্ট। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় রোববার বিকেল পর্যন্ত পড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে একথা বলেছেন আদালত।
রোববার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আসামি সংখ্যা বিবেচনায় দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই মামলার রায় পড়া শুরু হয়। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদপ্তরে রক্তাক্ত বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান।
আলোচিত এই মামলার রায় পড়া শুরু করলেও এদিন দুই বিচারপতি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। রায়ের সাজার অংশ পড়া এখনও শুরু হয়নি। সোমবার পূর্ণাঙ্গ রায় পড়া শেষ হবে জানিয়েছেন তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
১০ হাজার পৃষ্ঠার রায়ে পর্যবেক্ষণ এক হাজার পৃষ্ঠারও বেশি থাকছে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। এখন পর্যন্ত পড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস ও বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সীমান্তরক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনী দেশে-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এই কলঙ্কচিহ্ন তাদের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে।
নানা ঘটনা পর্যালোচনা করে আদালত বলেন, একসঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নজির ইতিহাসে নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বিডিআর নাম পরিবর্তন করে বিজিবি নাম ধারণ থেকে শুরু করে সীমান্তরক্ষায় নিয়েজিত এই বাহিনীর পুনর্গঠনের ইতিহাসও উঠে আসে আদালতের পর্যবেক্ষণে।
পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে ২০১৩ সালে ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। এ মামলায ৮৪৬ জন আসামির মধ্যে সাজা হয় ৫৬৮ জনের। তাদের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল। খালাস পেয়েছিলেন ২৭৮ জন।
বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা কার্যকরের অনুমতি (ডেথ রেফারেন্স) ও আপিল শুনানি শেষ হওয়ার সাত মাস পর হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ রোববার সকালে রায় পড়া শুরু করেন। ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৩৭০তম দিনে গত ১৩ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন।
কয়জন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে, কয়জন আসামির যাবজ্জীবন বহাল থাকবে, কতজন খালাস পাবেন—এসব দণ্ডের ব্যাপারে তিন বিচারপতিই একমত হয়েছেন বলে হাইকোর্ট জানিয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, এই ঘটনা নজিরবিহীন, এটি নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড; যা ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট ও চক্রান্ত হিসেবে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেওয়া, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা করে বিডিআরে তাদের আসা নিরুৎসাহিত করা, সেনা ও বিডিআরের মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি করা, গণতান্ত্রিক সরকারকে বিব্রত করা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করাই চক্রান্ত ও হত্যাযজ্ঞের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বলেও রায়ের আংশিক পর্যবেক্ষণে উঠে আসে।
♥আমাদের পেজে আরও পড়ুন♥
♥আমাদের পেজে আরও পড়ুন♥
টপারবিডি বাংলা-৭৭ম ২০২৩